বিডিনিউজ ১০ রিপোর্ট: দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে ভিআইপিদের (বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, বিচারপতি ও সংসদ সদস্য) আলাদা পরিবেশে চেকআপে (তল্লাশি) ‘কিছুটা’ ছাড় দেয়ার প্রস্তাব নাকচ করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) আইন ও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে এ ধরনের কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই বলে বেবিচকের পক্ষ থেকে বলা হয়।
বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কার্যপত্রে বেবিচকের একটি প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করা হয়।
এর আগে ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে বিচারপতি, সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীদের আলাদা পরিবেশে চেকআপে ‘কিছুটা’ ছাড় দেয়ার সুপারিশ করা হয়। বিষয়টি পরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সংসদীয় কমিটির।
এমনকি দেশের বিমানবন্দরগুলোয় সংসদ সদস্যসহ ভিআইপিদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা তল্লাশি শিথিল করতে কমিটির অনুরোধ অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে তা অগ্রাহ্য করার আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বেবিচকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হওয়ায় দেশের সব বিমানবন্দর বিশেষত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে আইসিএও প্রণীত এনেএক্স-১৭ অনুযায়ী ‘প্রিভেনটিভ সিকিউরিটি মেজার’ নেয়া বাধ্যতামূলক।
আইসিএও-এর আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশের আগে সিকিউরিটি স্ক্রিনিং করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র প্রতিপালন করে থাকে।
এছাড়া ওই আইনের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী বিমানবন্দরে এয়ারসাইডে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিমানের যাত্রী ও কেভিন চেকিং, হোল্ড ব্যাগেজ স্ক্রিনিং কার্গো, মেইল এবং অন্যান্য পণ্যের নিরাপত্তা চেকিং ও বিশেষ ধরনের যাত্রীদের জন্য অনুচ্ছেদ ৪.৭ অনুসরণ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, আইসিএও-এর রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের জন্য ন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি প্রোগ্রাম বা এনসিএএসপি প্রণীত হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এনসিএএসপি অনুসরণ করে নিরাপত্তা কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।
বেবিচকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সুনির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশনার অভাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তা চেকিংয়ে নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায়ই বিব্রত হচ্ছেন।
যদিও এনসিএএসপি অনুযায়ী কেউই নিরাপত্তা চেকিংয়ের আওতামুক্ত নন। ন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি প্রোগ্রামের নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তা তল্লাশি থেকে রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবার, প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার এবং জাতিসংঘের মহাসচিবকে নিরাপত্তা চেকিং থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ওই আইনের আওতায় জাতির পিতার পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্য, প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্য, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ/স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত কোনো ব্যক্তিকে নিরাপত্তা চেকিংয়ের বাইরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বেবিচক আমাদের আন্তর্জাতিক আইন দেখিয়েছে। বলেছে নিরাপত্তার কথাও। এজন্য সংসদীয় কমিটির সদস্যরা তা মেনে নিয়েছেন। নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা তো কিছু বলতে পারি না।
কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কাজী ফিরোজ রশীদ, তানভীর ইমাম, আশেক উল্লাহ রফিক ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার বৈঠকে অংশ নেন।
সুন্দরবন ঘিরে নতুন পর্যটন জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা : বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ঘিরে নতুন পর্যটন জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য সুন্দরবন এলাকায় বুয়েট কর্তৃক পর্যটন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, দেশে পর্যটন খাতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকার সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায়। যে কারণে সুন্দরবন এলাকায় নতুন পর্যটন জোন চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ পর্যটনকে আরও শক্তিশালী ও আকর্ষণীয় করতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা শহরের সব পর্যটন কেন্দ্রকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনকে একটি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে পর্যটন খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ সময় পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় এক্সক্লুসিভ ইকোটুরিজম জোন করার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের অনুকূলে জমি বন্দোবস্ত দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
বৈঠকে আলোচনা শেষে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের পুনঃসংস্কার কাজের সঙ্গে কোন প্রতিষ্ঠান জড়িত, কত টাকা ব্যয় হয়েছে এবং টেন্ডার কোন প্রক্রিয়ায় দেয়া হয়েছে, তার একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।